মসজিদের জমি অযোধ্যার বাইরে, মুসলিমদের ক্ষোভ

ভারতের অযোধ্যায় ভেঙে ফেলা বাবরি মসজিদ থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে নতুন মসজিদ তৈরির জন্য সরকার জমি বরাদ্দ করার পর দেশের বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী মুসলিম সংগঠন তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে। খবর: বিবিসি বাংলা।

গত ৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট তাদের রায়ে অযোধ্যার কোনও উল্লেখযোগ্য স্থানে বিকল্প মসজিদ তৈরির জন্য সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে পাঁচ একর জমি দিতে বলেছিল।

তবে উত্তরপ্রদেশ সরকার এজন্য যে জায়গাটি বেছে নিয়েছে তা অযোধ্যা শহর থেকে বেশ অনেকটা দূরে, লখনৌ-ফৈজাবাদ মহাসড়কের ধারে একটি গ্রামে – যা অনেক মুসলিম নেতারই মন:পূত নয়।

উত্তরপ্রদেশের সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, যারা বাবরি মসজিদ-রামমন্দির মামলায় অন্যতম পক্ষ ছিল, তারা অবশ্য এই জমির ব্যাপারে তাদের অবস্থান এখনও স্পষ্ট করেনি।

অযোধ্যায় রামমন্দির তৈরি করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন বুধবার একটি ট্রাস্ট গঠনের কথা পার্লামেন্টে ঘোষণা করেন, তার ঠিক পর পরই উত্তরপ্রদেশ সরকারও জানিয়ে দেয় মসজিদ নির্মাণের জন্য তারাও জায়গা চূড়ান্ত করে ফেলেছে।

মাসতিনেক আগে সুপ্রিম কোর্টের রায়েই এই দুটো পদক্ষেপ কার্যকর করতে বলা হয়েছিল।

উত্তরপ্রদেশ সরকারের মুখপাত্র ও ক্যাবিনেট মন্ত্রী শ্রীকান্ত শর্মা জানান, তাদের শর্টলিস্ট করা তিনটি জায়গার মধ্যে থেকে কেন্দ্র একটিকে মসজিদের জন্য বেছে নিয়েছে।

তিনি জানান, এই জায়গাটি অযোধ্যা জেলার ধন্নিপুর গ্রামে, লখনৌ হাইওয়ের ওপর এবং রৌনাহি থানার ঠিক পেছনে অবস্থিত। এই বরাদ্দকৃত জমিটি জেলা সদর দফতর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে।

“যাতায়াতের সুবিধা, এলাকার সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্য, প্রশাসনিক ও আইন-শৃঙ্খলার দৃষ্টিতে এই জায়গাটি সব দিক থেকেই উপযুক্ত” বলেও দাবি করেন তিনি।

কিন্তু জায়গার ঘোষণা হতেই বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন বলতে থাকে, মূল অযোধ্যা থেকে এত দূরে মসজিদের জন্য জমি দিয়ে কী লাভ? আর সেটা কীভাবেই বা বাবরি মসজিদের বিকল্প হতে পারে?

বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটির নেতা ও আইনজীবী জাফরিয়াব জিলানি মন্তব্য করেন, মসজিদের জন্য এই জমি কিছুতেই গ্রহণ করা উচিত হবে না।

জিলানির কথায়, “প্রথম কথা হল মসজিদ ভাঙার বিনিময়ে কোনও জমি আমরা নিতেই পারি না, এটা ওয়াকফ আইন আর শরিয়ত – দুয়েরই বিরোধী।”

“তবে রিভিউ পিটিশনে আমাদের এই বক্তব্য সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করে দিয়েছে।”

“তবে গত ৯ নভম্বেরের রায়ে তারা বলেছিল, অধিগ্রহণ করা ৬৭ একরের ভেতরে না-হলেও অযোধ্যারই কোনও ‘প্রমিনেন্ট প্লেস’ বা উল্লেখযোগ্য স্থানে মসজিদের জন্য জায়গা বরাদ্দ করতে হবে।”

“কিন্তু যে জায়গাটার কথা বলা হচ্ছে সেটা অযোধ্যাতেও নয়, প্রমিনেন্টও নয়!”

ভারতে মুসলিমদের সবচেয়ে প্রভাবশালী সংগঠন অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের সিনিয়র সদস্য কামাল ফারুকিও বলেছেন, “এমন কী তাজমহল চত্বরের ভেতরে জমি দিলেও তা নেওয়া ঠিক হবে না।”

বোর্ডের নেতা মৌলানা ইয়াসিন ওসমানি কিংবা হায়দ্রাবাদের এমপি আসাদুদ্দিন ওয়াইসি-ও এই জমি নেওয়ার বিপক্ষেই মত দিয়েছেন।

তবে অযোধ্যায় রামমন্দিরের করসেবায় অংশ নেওয়া, বিজেপির মুসলিম সমর্থক বাবলু খান মনে করছেন ধান্নিপুর গ্রামের জায়গা নিয়ে অসুবিধার কিছু নেই।

বাবলু খানের কথায়, আমরা আগাগোড়াই বলে আসছি এমন জায়গায় জমি দরকার যেখানে মুসলিম জনসংখ্যা বেশি থাকবে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা যাবে।

“সে দিক থেকে ধান্নিপুর ঠিকই আছে, কারণ এখানে প্রায় নব্বই শতাংশ মুসলিম।”

“তবে আমরা এটাও দাবি করব যেভাবে রামমন্দিরের জন্য ট্রাস্ট তৈরি করা হয়েছে, তেমনি মসজিদে বানাতেও একটি ট্রাস্ট করে দেওয়া হোক।”

অযোধ্যাকে ঘিরে হিন্দুদের যে চোদ্দ ক্রোশ পরিক্রমার তীর্থপথ আছে, হিন্দু গোষ্ঠীগুলোর দাবি ছিল মসজিদের জমি তার বাইরে হতে হবে।

উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথের সরকার সেই দাবি মেনে নিয়েছে বলেই এখন দেখা যাচ্ছে। তবে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান জাফর ফারুকি এই জমির ব্যাপারে তাদের অবস্থান এখনও স্পষ্ট করেননি।

ধারণা করা হচ্ছে, ২৪ ফেব্রুয়ারি ওয়াকফ বোর্ডের বৈঠকেই তারা এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন